কাসাভা
- কাসাভা হলো উষ্ণমন্ডলীয় অঞ্চলের আলুজাতীয় ফসল
- বাংলাদেশে কাসাভা বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে
- গ্রামের মানুষ কাসাভার কন্দকে ‘শিমুল আলু’ বলে
- কাসাভা একটি রোগজীবানু ও পোকামাকড়ের আক্রমন প্রতিরোধি ফসল
পুষ্টিগুনঃ
- কাসাভায় শর্করা, প্রোটিন এবং জলীয় অংশ বিদ্যমান
- কাসাভাতে আলুর চেয়ে বেশী শর্করা থাকে
- কাসাভাতে মোট কাসন হিসাবে মানিয়ে পাওয়া যায়
- কাসাভাতে ক্রুড ফাইবার, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন ও ভিটামিন সি পাওয়া যায়
জাত:
কাসাভার অনেকগুলো প্রচলিত ও উন্নত জাত রয়েছে । কৃষকরা খাবার ও বানিজ্যিক উদ্দ্যেশ্যের ভিত্তিতে জাত নির্বাচন করে থাকে । খাবারের জন্য অনেক অঞ্চলে মিষ্টি জাতের কাসাভা চাষ করা হয় । ভারতে কাসাভার জনপ্রিয় হাইব্রিড জাতগুলো হলো M-4, H-97, H-165,H-226, H-1687, H-2304 I S-856। ইন্দোনেশিয়ায় ADIRA-1,2,3,4 থাইল্যান্ডে RAYONG-1,2,3,60 ফিলিপাইনে PR-C 13,24,62 এবং চীনে SC-201,205,124জাতগুলো জনপ্রিয় । নাইজেরিয়ায় TMS-3001,30572,50395,30555এবং কলম্বিয়ায় M.Col.-2215,1684, M.BRA-5,12 জাতগুলো উল্লেখযোগ্য ।
চাষ কৌশলঃ
মাটি:
- উষ্ণ ও নাতিষিতোষ্ণ অঞ্চল কাসাভা চাষের জন্য উপযোগী
- অনুর্বর পাহাড়ী মাটি কিংবা বালি মাটি এ ফসলের জন্য উপযোগী
- ফসলে জলাবদ্ধতা ও উচ্চ লবনাক্ততা সহ্য করতে পারে না
জলবায়ু:
- কাসাভা একটি খরা সহনশীল ফসল
- তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রীর নিচে ও ২৫-৩০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডে চাষ করা উপযুক্ত
- সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ২৩০০ মিটার উপরেও কাসাভা চাষ করা যায়
বংশবৃদ্ধি:
- গাছ লাগানোর জন্য কাটিং এবং বীজ ব্যবহার করা যায়
- পরিপক্ক কান্ডের কাটিং বানিজ্যভাবে চাষে ব্যবহার করা হয়
- সুস্থ এবং রোগমুক্ত কান্ডগুলো ছায়াযুক্ত স্থানে সংরক্ষন করতে হবে
- কান্ডকে ১৫-২০ সেমি করে কেটে সোজা করে লাগাতে হবে
- প্রতিটি কাটিং এ কমপক্ষে ৫ থেকে ৭ টা নোড থাকতে হবে
জমি তৈরি:
- সাধারনত জমিতে চাষের প্রয়োজন হয় না
- বানিজ্যিকভাবে চাষের জন্য জমি চাষ করা যেতে পারে
- পিট তৌরি করে কাসাভার কাটিং বা সেট লাগানো হয়
- পাহাড়ী এলাকায় এটি একটি সহজ ও সুবিধাজনক পদ্ধতি
- পিটগুলো মাটি থেকে একটু উপরের দিকে উঠানো হলে ফলন ভালো পাওয়া যায়
লাগানোর নিয়ম:
- ১০,০০০ গাছ লাগানো যায় প্রতি হেক্টর জমিতে
- একটি গাছ থেকে অন্য গাছের দূরুত্ব ৭৫ থেকে ৯০ সেমি রাখতে হবে
- কাটিং মাটিতে লাগানোর সময় ২০ সেমি মাটির নিচে এবং ৫ সেমি মাটির উপরে থাকতে হবে
- সাধারনত ১৫-২০ দিনের মধ্যে কাটিং থেকে নতুন কুশি বের হয়
- যেসব কাটিং থেকে কুশি বের হবে না সেগুলো তুলে ফেলে সেখানে ৪০ সেমি আকারে নতুন কাটিং লাগাতে হবে
লাগানোর সময়:
- সারা বছরই গাছ লাগানো যায়
- বর্ষার শুরুতে কাসাভার কাটিং লাগানো ভালো
- এপ্রিল – মে মাস কাসাভা লাগানোর সবচেয়ে উপযুক্ত সময়
সার ব্যবস্থাপনা:
- হেক্টর প্রতি ১৮০-২০০ কেজি নাইট্রোজেন প্রয়োগ করলে সর্বাধিক ফলন পাওয়া যায়
- হেক্টর প্রতি ১৫-২২ কেজি ফসফরাস প্রয়োগ করলে সর্বাধিক ফলন পাওয়া যায়
- হেক্টর প্রতি ১৪০-১৬০ কেজি পটাসিয়াম প্রয়োগ করলে সর্বাধিক ফলন পাওয়া যায়
সেচ:
- কাটিং লাগানোর পর গাছ গজানোর জন্য ২ বার সেচ দিতে হবে
- দীর্ঘদিন খরা অবস্থা বিরাজ করলে হালকা সেচের ব্যবস্থা করা যেতে পারে
- এতে ফলন বৃদ্ধি পায়
আন্তঃপরিচর্যা:
গাছ লাগানোর পর এক মাস অন্তর অন্তর গোড়ার আগাছা পরিস্কার করে গোড়ায় মাটি তুলে দিলে ফলন ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। রোগবালাই ও পোকামকড়ের আক্রমন খুবই কম হলেও, মাকড়ের আক্রমন সেইসাথে একটি সমস্যা হতে পারে। এই অবস্থায় রোগবালাই ও পোকামাকড় মুক্ত কাটিং করতে হবে এবং মাকড়ের আক্রমন থেকে ফসলকে রক্ষা করতে হলে আক্রমন দেখা দেবার সাথে সাথে মাকড়নাশক স্প্রে করতে হবে। ইঁদুর মাটির নিচের কাসাভার খেলে বেশ ক্ষতি সাধন করে থাকে, তাই বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ ও বিষটোপ ব্যবহার করে ইঁদুর দমন করা উচিত।
এজন্য মাকড়নাশক স্প্রে এবং ইঁদুর দমনের পরামর্শ মেনে চলা উচিত যা ফসলের বৃদ্ধির উপর সামার্থ্য বাড়ায়। ফলে গাছ লাগানোর সময় গোড়ার আগাছা পরিস্কার করা এবং মাকড়নাশক ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। এছাড়া, ইঁদুর ক্ষতি থেকে রক্ষা করার জন্য উপযুক্ত ফাঁদ ও বিষটোপ ব্যবহার করা দরকার। এভাবে ফসলের ফলন বৃদ্ধি করতে হলে উপরোক্ত পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করা জরুরী।
ফলন:
হেক্টর প্রতি সাধারণভাবে ২৫-৩০ টন ফলন প্রাপ্তির সম্ভাবনা থাকে, তবে এটি উন্নত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বৃদ্ধি করা সম্ভব। উন্নত জাতের চাষ করে হেক্টর প্রতি ৫৫ থেকে ৬০ টন ফলন পেতে সম্ভব। সবগুলি অধ্যায়ে শ্রম, সঠিক পুঁয়ি পরিচর্যা, বারটি এবং অন্যান্য পরিচর্যা কার্যক্রমে কৌশলে প্রয়োগ করা উচিত। প্রতিটি প্রকৌশলের ব্যবহার সঠিক সময়ে এবং ঠিক প্রমাণে প্রয়োগ করা জরুরি।
গুদামজাতকরন:
- গুদামজাতকরনের সীমাবদ্ধতা কাসাভা উৎপাদনের সবচেয়ে বড় সমস্যা
-কাসাভা সাধারনত গুদামজাত করে সংরক্ষন করা যায় না
- উত্তোলন না করে গাছসহ মাটির নিচে রেখে দিলে কাসাভা নষ্ট হয় না
- কৃষককে তার প্রয়োজনমতো জমি থেকে কাসাভা সংগ্রহ করতে হবে
- স্টার্চ উৎপাদনের জন্য কাসাভা সংগ্রহের কয়েকদিনের ভিতরই কারখানায় প্রেরন করতে হয়
- কাসাভা নষ্ট হয় না কাসাভা নিচে মাটির নিচে রেখে দিলে
- কারখানায় প্রেরন করতে হয় কাসাভা সংগ্রহের কয়েকদিনের ভিতরই
- কাসাভা রেখে দিয়ে ১০-১৫ দিন পর্যন্ত সংরক্ষন করা যায়
- ০.৪% থায়োবেনডাজল দ্বারা কাসাভা আলু শোধন করে পলিথিন ব্যাগে সংরক্ষন করলে কাসাভা তিন সপ্তাহ পর্যন্ত ভালো থাকে
0 Comments